Poem

১৫টি সেরা বসন্তের কবিতা | বসন্ত এসে গেছে

বসন্ত এসে গেছে বলে কি আপনি বসন্তের কবিতা খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব অসাধারণ কয়েকটি বসন্তের কবিতা যেগুলো পড়ে আপনি বসন্তের অনুভুতি পাবেন।

বসন্ত প্রতি বছরে একবার আসে। বসন্ত বাংলা ঋতুর মধ্যে শেষ ঋতু। এই ঋতুকে ঋতুর রাজা বলা হয়। নতুন ফুল, গাছে পাতা ফোটে এই ঋতুতে। পাখির মিষ্টি সুরে গানের ডাক শোনা যায় বসন্তকালে। অনেক কবি বসন্তকালকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কবিতা লিখেছেন।

বসন্তের জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন অনেক কবি সাহিত্যিক প্রকৃতির নতুন রূপ দেখার জন্য। বসন্ত ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান হয়। এসকল অনুষ্ঠানে বসন্তের কবিতা আবৃতি করে শোনালে মন্দ হয় না। এছাড়াও সোসাল মিডিয়ায় বসন্ত নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া পাশাপাশি বসন্তের কবিতাও পোস্ট করা যেতে পারে।

তো যাই হোক আপনাদের জন্য সেরা সকল কবিতা আর্টিকেলটিতে শেয়ার করেছি। বসন্তের কবিতাগুলো পড়ে দেখুন আশা করছি আপনার ভালো লাগবে।

Table of Contents

বসন্তের কবিতা

বসন্ত নিয়ে যেসকল সেরা কবিতা রয়েছে সেই সবগুলো আর্টিকেলে পাবেন আপনারা। কবিতার নাম ও কবির নাম সহ কবিতাগুলো একে একে দেওয়া হলো।

আর্টিকেলে বিষয়বসন্তের কবিতা
মোট কবিতা১৫ টি

বসন্তের আগমনী – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কবিতা বসন্তের আগমনী, লেখক লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কুয়াশাভরা মেঘ গেছে কেটে
শীতের প্রকোপ নাই,
তরু শাখে হেরি নব কিশলয়
বিহগেরা গাহে তাই।

আম্রকাননে শুনি ক্ষণে ক্ষণে
কোকিলের কুহুতান,
আজি বসন্তে বসন্তের দূত
গাহে আগমনী গান।

আম্রের শাখে নব মঞ্জুরী
মুকুল ধরেছে কত,
কমল কাননে ধায় অলিগণে
গুঞ্জরিয়া অবিরত।

বসন্ত প্রভাতে অজয়ের ঘাটে
সুশীতল নদীজলে,
ভাটিয়ালি গেয়ে দাঁড় টানে মাঝি
ঘাট ভরে কোলাহলে।

যেদিকে তাই নব কিশলয়
পুলক জাগিছে মনে,
বসন্ত এসেছে কুসুম ফুটেছে
পলাশের বনে বনে।

পাখিরা – জীবনানন্দ দাশ

কবিতা পাখিরা, লেখক জীবনানন্দ দাশ

ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে –
বসন্তের রাতে
বিছানায় শুয়ে আছি;
– এখন সে কত রাত!
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর,
স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর।
তারপর চ’লে যায় কোথায় আকাশে?
তাদের ডানার ঘ্রাণ চারিদিকে ভাসে।

শরীরে এসেছে স্বাদ বসন্তের রাতে,
চোখ আর চায় না ঘুমাতে;
জানালার থেকে ওই নক্ষত্রের আলো নেমে আসে,
সাগরের জলের বাতাসে
আমার হৃদয় সুস্থ হয়;
সবাই ঘুমায়ে আছে সব দিকে –
সমুদ্রের এই ধারে কাহাদের নোঙরের হয়েছে সময়?
সাগরের ওই পারে – আরো দূর পারে
কোনো এক মেরুর পাহাড়ে
এইসব পাখি ছিল;
ব্লিজারডের তাড়া খেয়ে দলে দলে সমুদ্রের’পর
নেমেছিল তারা তারপর,
মানুষ যেমন তার মৃত্যুর অজ্ঞানে নেমে পড়ে !
বাদামি – সোনালি – শাদা – ফুটফুট ডানার ভিতরে
রবারের বলের মতন ছোটো বুকে
তাদের জীবন ছিল –
যেমন রয়েছে মৃত্যু লক্ষ লক্ষ মাইল ধ’রে সমুদ্রের মুখে
তেমন অতল সত্য হয়ে।

কোথাও জীবন আছে – জীবনের স্বাদ রহিয়াছে,
কোথাও নদীর জল রয়ে গেছে- সাগরের তিতা ফেনা নয়,
খেলার বলের মতো তাদের হৃদয়
এই জানিয়াছে;
কোথাও রয়েছে প’ড়ে শীত পিছে, আশ্বাসের কাছে
তারা আসিয়াছে।

তারপর চ’লে যায় কোন এক ক্ষেতে
তাহার প্রিয়ের সাথে আকাশের পথে যেতে যেতে
সে কি কথা কয়?
তাদের প্রথম ডিম জন্মিবার এসেছে সময়।

অনেক লবণ ঘেঁটে সমুদ্রের পাওয়া গেছে এ মাটির ঘ্রাণ ,
ভালোবাসা আর ভালোবাসার সন্তান,
আর সেই নীড় ,
এই স্বাদ – গভীর – গভীর ।
আজ এই বসন্তের রাতে
ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে;
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর
স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর

একা – বীথি চট্টোপাধ্যায়

কবিতা একা, লেখক বীথি চট্টোপাধ্যায়

আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস
চতুর্দিকে শিমূল-পলাশ কৃষ্ণচূড়ার ত্রাস।

ঝড় উঠেছে নিখুঁত কালো বৃষ্টি ভেজা রাত
আঁচল দিয়ে দুঃখ ঢাকি কোথায় তোমার হাত?

তব্ধ যদি ভালোবাসা প্রেমের-কম্পন
ফিরিয়ে দাও কিশোরীকাল প্রথম চুম্বন।

ভালোবাসার আগুন ঝড়ে চাইনি কোনো দাম
অশ্রুবিহীন চক্ষু হল প্রেমের পরিণাম।

এই সময়েই ভিন্ন হলে এমন চৈত্রমাস
ভালোবাসার ফুটছে কলি, ফাল্গুন বাতাস!

এই যে চোখ এই যে প্রেম, এই যে হা-হুতাশ
এই বসন্তে দেবো কাকে প্রেমের আস্বাস?

আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস
ভালোবাসা বাসার পরে, ভাঙলে বিশ্বাস!

বসন্তের আগমনী – হেমন্ত সৎপতি

কবিতা বসন্তের আগমনী, লেখক হেমন্ত সৎপতি

নয়নে বসন্ত হৃদয়ে বসন্ত
বসন্ত এসেছে মনে,
রঙের ধারায় ভরেছে ভুবন
বাতাস বইছে গানে।
অশোক পলাশ শিমুল রাঙে যে
কুসুম ফুটেছে বনে,
বধুয়া আমার শরম পেয়েছে
লুকায়ে ঘরের কোণে।
শিহর জেগেছে মনের ভিতরে
ফাগুয়া আগুন সনে,
প্রেমের স্ফুরণ ঘটছে গভীরে
কোনো না বারণ মানে।
গুঞ্জে অলিরা পুঞ্জে পুঞ্জে
ছুটছে মধু সে পানে,
ফুলের পসরা কুঞ্জে কুঞ্জে
কোকিল ভরায় তানে।
বধুয়া আমার নাইরে সে লাজে
আর যে ঘরের কোণে,
রঙের ভুবনে সুরের ভুবনে
হাসছে খেলছে সনে।
মধুর বসন্ত প্রেমের বসন্ত
বসন্ত ধরেছে মনে,
বইছে বসন্ত ভাসছে বসন্ত
কবিতা ও গল্প গানে।

থেকো, বসন্ত সন্ধ্যায় – সুব্রত পাল

কবিতা থেকো, বসন্ত সন্ধ্যায়, লেখক সুব্রত পাল

॥ ১ ॥

যদি বসন্ত পলাশ খোঁজে, খুঁজুক। তুমি খুঁজো না
রাঙামাটির পথে হাঁটতে ইচ্ছে করলে, হেঁটো না
শুধু আমাকে খুঁজো
আমি তো দুরন্ত ফাল্গুন গোটা গায়ে মেখে
তোমার জন্য বসে আছি
মনে মনে মাদল বাজাচ্ছি আর
গোধূলির রঙ দেখছি দিগন্তে
যদি বসন্ত তোমাকে ডাকে, ডাকুক। তুমি যেয়ো না
আঙুল ছুঁতে ইচ্ছে করলে, ছুঁয়ো না। কথা বোলো না
শুধু আমাকে ছুঁয়ো
আমি তো পাতায় পাতায় লুকিয়ে রেখেছি
সব ঢেউ, দ্বীপ, দ্বীপপুঞ্জ
গহন অরণ্য হয়েছি
কুয়াশায় সেজেছি কখনো
তবু যদি বসন্ত আসে তোমার কৃষ্ণচূড়া ডালে
আর কোকিল ডাকে, তবে অপেক্ষা কোরো।
আমি আবির নিয়ে আসছি, থেকো…

॥ ২ ॥

নিজেকে দেখাতে গিয়ে শুধু তোমাকেই দেখছি
এই বসন্তসন্ধ্যায়
সমস্ত আড়াল, অভিমান, সমস্ত সীমারেখা
উপেক্ষা করে আজ তোমারই সামনে এসেছি
এই আনমনা মন, মনের ভেতর তরঙ্গ
এই ভ্রূভঙ্গি, এই ঠোঁটের উচ্চারণ
সব যদি আলাদা মনে হয়
এসো, তাহলে স্পর্শে বুঝি দুরন্ত অস্থিরতা
এসো, ক্রমাগত আঁকড়ে ধরি
আর ক্রমাগতই বাঁচার চেষ্টা করি
হে আমার কাঙ্খিত প্রেম
আগে তো বলো নি কখনো
ভালোবাসায় এত কষ্ট থাকে
এত আলোড়ন, এত নিঃসঙ্গতা
কখনো কিছু তো বুঝে নিও
কিছু অনুচ্চারিত শব্দ, কিছু সমুদ্র ফেনায়
ছিটেফোঁটা যন্ত্রণা, বুঝে নিও
আজ পূর্ণিমা নাকি অমাবস্যা
আকাশে চাঁদ আছে কি নেই, কিচ্ছু জানি না আমি
শুধু বসন্ত জানি আর জানি তোমাকে
তাই তো তোমারই সামনে এসেছি
তোমাকেই দেখছি
দেখছি ভরসার মত করে, কান্নার মত করে
স্পর্ধার মত করে, ইচ্ছের মত করে
শুধু তোমাকেই দেখছি
অথচ আমি নিজেকেই দেখাতে এসেছিলাম
এই বসন্তসন্ধ্যায়।

আমার শহরঃ বসন্তের প্রেম – প্রদীপ বালা

কবিতা আমার শহরঃ বসন্তের প্রেম, লেখক প্রদীপ বালা

বসন্ত তবে এসেই গেল, বুঝলে ভায়া!
একটা কুকুর শুকছে আমার পায়ের ধুলো
চমকে উঠে পেছনে দেখি, কি বেহায়া!
আমার হাতে আধখানা রোল, ঝুলছে নুলো
ছ’টা পঁচিশ, পেটে তখন ছুঁচোর সেকি লাফ
বসন্ত যদি এসেই থাকে তোর বাপের কি
ছুটছে সবাই বাস ধরবে ট্রেন ধরবে
উল্টোডাঙ্গার মোড়ে শুধু আমি একাকী…
কী আর হবে বসন্ত এলে, ভিক্টোরিয়া
ময়দান আর পার্কে শুধু ভীড় বাড়বে
শীতে দেখিয়ে খেত সবাই, এখন মুখ লুকোবে
ছাতার তলায়। আমারও সময়, বাস ছাড়বে।
ছিল না কি বসন্ত আমারও, একটা দুটো…
ছাতার তলায় ঘন হয়ে বসে পৃথিবীতে মুখ
উত্তাপে আর উত্তাপে তোর বুকে
ঘাম আর ঘ্রাণের ভেতর খুঁজিনি প্রেমের সুখ ?
তবুও তো প্রেম এলো না, তার বদলে
একতাল মাংস এল উঠে, চিকেন কষা
কপাৎ করে গিলে ফেলে দেখি তোকে
কোমরে বেশ মেদ জমেছে,বাসের সীটে বসা।
ধুস শালা! বাস ছুটে যায় ধুলোর বেগে
হাজার হাজার ধুলো তখন প্রেমের খেলা
খেলতে থাকে, হাতে হাত রেখে সবাই
পার হয়ে যায় রাস্তা ঘাট এই বেলা
আমিই শুধু দাঁড়িয়ে থাকি, ভীড়ের ভেতর
ছুটোছুটি যন্ত্র মানব,বসন্ত এসে গেছে
সময় এসে লাথ মারে পেছনে, “ভাগ শালা
সময় নেই প্রেম মারাতে গেছে!”
হটাত করেই বাসটা এসে গেল
আমারও তখন ঘরে ফেরার তাড়া
বাসের ধোঁয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেল
তোমার আমার চোখের ইশারা
সে ইশারার একটুখানি রেশ বুকের ভেতর
সযত্নে রাখি, হটাত হটাত ঠোকর মেরে ফেরে
বাসে উঠে বসন্তকে পেছনে ফেলে দেখি
আধখানা প্রেম ঝুলে আছে উল্টো ডাঙ্গার মোড়ে!

ফুল ফুটুক না ফুটুক – সুভাষ মুখোপাধ্যায়

কবিতা ফুল ফুটুক না ফুটুক, লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।
গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।
লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –
ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !
তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।

বসন্ত বন্দনা – নির্মলেন্দু গুণ

কবিতা বসন্ত বন্দনা, লেখক নির্মলেন্দু গুণ

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা, -দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কী আনন্দ জাগানিয়া।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিতা আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীত-মুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে –
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।

নব বসন্তের গান – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কবিতা নব বসন্তের গান, লেখক লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বসন্তের রং লাগে
ফুলশাখে ফুলবাগে
বসন্ত এলো রে এ ধরায়,
বসন্তের আগমনে
রং লাগে দেহ মনে
তরুশাখে পাখি গীত গায়।
নব নব কিশলয়,
পত্রে পল্লবিত হয়
সুশীতল অজয়ের নীর,
রাঙাপথে দুইধারে
তালগাছ সারে সারে
মন্দগতি বহিছে সমীর।
অজয় নদীর ঘাটে
সূর্য আসি বসে পাটে
সোনালী কিরণ ঝরে জলে,
বসন্ত এলো আজি,
নব নব রূপে সাজি
বসন্ত আসিল ধরাতলে।

এলো বনান্তে পাগল বসন্ত – কাজী নজরুল ইসলাম

কবিতা এলো বনান্তে পাগল বসন্ত, লেখক কাজী নজরুল ইসলাম

এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।
কিশলয়ে-পর্ণে অশান্ত ওড়ে তা’র অঞ্চল প্রাস্ত।
পলাশ-কলিতে তা’র ফুল-ধনু লঘু-ভার,
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।
এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে।
অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে।
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।

বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি – মহাদেব সাহা

কবিতা বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি, লেখক মহাদেব সাহা

চুনা-ওঠা দেয়ালের মতো প্রকৃতির এই খসখসে গালে
আর কী রং মাখাবে চৈত্র,
তোমার পকেটে ভাঁজ-করা শতবর্ষের শীতকাল,
মাতাল হাওয়ায় যতই এই বার্ধক্য ঢেকে দিতে চাও
তার মুখমণ্ডলে জমে আছে
উত্তর গোলার্ধের অনন্ত বরফ
তার শরীর ২৫ ডিগ্রি মাইনাস শীত রাত্রে;

কেনা জ্যেত্স্না, গোলাপ আর সৌরভের জন্য
হাহাকার করে
আমি কতোকাল শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে
এই শীতকাল পেরুব? গুনগুন করা চৈত্র সন্ধ্যা
মধুর দুপুর
এখনো আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
আমি সাড়া দেই না;
কেন দেব? আমার শীত কখন অস্ত যাবে,
কেউ জানে না।

হয়ত তবু সদ্যফোটা স্তনের গন্ধে, ঠোঁটের লাবণ্যে
জেগে উঠবে ঝিমিয়ে-পড়া দিনরাত্রি,
একুশ শতকের এই দীর্ঘ শীত পাড়ি দেওয়ার জন্য
আর কতো হিমযুগ পার হতে হবে আমাকে,
বসন্ত, তোমার হাতবাক্সে কি সেই উত্তর লেখা আছে?
চলো বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি শোনাতে শোনাতে
আমরা পৃথিবীর সব নদী পার হই।

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত – তসলিমা নাসরিন

কবিতা ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, লেখক তসলিমা নাসরিন

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত,
তবু এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়-
প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে
পাথর শরীর বয়ে ঝরনার জল ঝরে।
এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি
নির্জন বৈশাখে, মাঘ-চৈত্রে-
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি।
প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই
ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী
ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না-ফুরানো দীর্ঘ রাত।
একবার ডাকলেই
সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে
একবার ভালোবাসলেই
সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।
ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল
সহস্র বছর যাবে আরো,
তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।

বাসন্তী উপহার

কবিতা বাসন্তী উপহার, লেখক অজানা

বাসন্তী উপহার রঙিন পাতার।
ঝরে পড়ে বাতাসে
বাদামি কালো খয়েরি সবুজ…
ধূসর মাটিতে, নিটোল জলে, সমীরণে
ফুল-ফলে বিচিত্র আল্পনা
মাছদের কিলবিল, রেণুর সুবাস
কলকাকলির নাগরদোলায় বাসন্তী আয়োজন।

মন আজ চঞ্চলা নদী-খরোস্রোতা
বাসন্তী উপহারে
সালাম-জব্বারদের শক্তির সঞ্চরণ ধমনির
আমাদের।

তাহারেই পড়ে মনে – বেগম সুফিয়া কামাল

কবিতা তাহারেই পড়ে মনে, লেখক বেগম সুফিয়া কামাল

“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”

কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”

কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”

বসন্তের কবিতা রবি ঠাকুরের

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে অনেক কয়েকটি সেরা কবিতা লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতার নাম হলো –

  • আয় রে বসন্ত
  • বসন্তের হাওয়া যবে অরণ্য মাতায়
  • বসন্ত আওল রে
  • বসন্ত যে লেখা লেখে
  • বসন্ত-অবসান
  • বসন্ত পাঠায় দূত

বসন্ত – অবসান – রবি ঠাকুর

কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান!
কখন বকুল-মূল ছেয়েছিল ঝরা ফুল,
কখন যে ফুল-ফোটা হয়ে গেল অবসান!
কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান!

এবার বসন্তে কি রে যুথীগুলি জাগে নি রে!
অলিকুল গুঞ্জরিয়া করে নি কি মধুপান!
এবার কি সমীরণ জাগয় নি ফুলবন,
সাড়া দিয়ে গেল না তো, চলে গেল ম্রিয়মাণ!
কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান!

যতগুলি পাখি ছিল গেয়ে বুঝি চলে গেল,
সমীরণে মিলে গেল বনের বিলাপতান।
ভেঙেছে ফুলের মেলা, চলে গেছে হাসি – খেলা,
এতক্ষণে সন্ধ্যাবেলা জাগিয়া চাহিল প্রাণ।
কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান!

বসন্তের শেষ রাতে এসেছি রে শূন্য হাতে,
এবার গাঁথি নি মালা, কী তোমারে করি দান!
কাঁদিছে নীরব বাঁশি, অধরে মিলায় হাসি,
তোমার নয়নে ভাসে ছলছল অভিমান।
এবার বসন্ত গেল, হল না, হল না গান!

বসন্ত পাঠায় দূত – রবি ঠাকুর

বসন্ত পাঠায় দূত
রহিয়া রহিয়া
যে কাল গিয়েছে তার
নিশ্বাস বহিয়া।

বসন্ত এসে গেছে

বসন্ত এসে গেছে এটি কোন বসন্তের কবিতা নয়। এটি বসন্তের গান। বসন্ত এসে গেছে গানটি গেয়েছে লগ্নজিতা চক্রবর্তী। গানটির লিরিক্স নিম্নে দিয়ে দেওয়া হলো।

বাতাসে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিলো নেশা
কারা যে ডাকিলো পিছে,
বসন্ত এসে গেছে
মধুর অমৃতবানী বেলা গেল সহজেই
মরমে উঠিল বাজি বসন্ত এসে গেছে
থাক তব ভুবনের ধুলি মাখা চরনে
মাথা নত করে রব ..
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।

গগনের নভোনীলে মনেরও গোপনে
বাজে ঐ, বাজে ঐ, বাজে ঐ
পলাশেরও নেশা মাখি চলেছি দুজনে
বাসনার রঙে মিশি শ্যামলে স্বপনে
কুহু কুহু শোনা যায়,
কোকিলের কুহু তান ..
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।

পূর্ণিমা রাতে ঐ ছোটাছুটি করে কারা
দখিনা পবনে দোলে বসন্ত এসে গেছে
কেমনে গাঁথিব মালা কেমনে বাজিবে বেনু
আবেগে কাঁপিছে আঁখি বসন্ত এসে গেছে।
থাক তব ভুবনের ধুলি মাখা চরনে
মাথা নত করে রব ..
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে,
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।

এই বসন্তে অনেক জন্ম আগে
তোমায় প্রথম দেখেছিলেম আমি
হেঁটেছিলেম নিরুদ্দেশের পানে
সেই বসন্ত এখন ভীষণ দামি
আমার কাছে, তোমার কাছে,
আমার কাছে, বসন্ত এসে গেছে
থাক তব ভুবনের ধুলি মাখা চরনে
মাথা নত করে রব..
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে,
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে ..

উপসংহার

আর্টিকেলটিতে সেরা সকল বসন্তের কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেস্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলে থাকা বসন্তের কবিতাগুলো আপনার ভালো লেগেছে। কবিতাগুলোর মধ্যে কোন কবিতা আপনার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

এছাড়াও আপনি যদি আরো কোন বসন্তের কবিতার নাম জানেন তাহলে সেই কবিতার নাম জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ আপনাকে টিউনবিএনে ভিজিট করে আমাদের সাথে থেকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের আরো অনেক আর্টিকেল পেতে।

Imran Hossan

I am Imran, a student with the dream of becoming a professional developer, I love to explore, explore, learn interesting things on the Internet.

Related Articles

4 Comments

  1. I am Tarun Chowdhury. I am ICT district ambassador. I love to write and read poetry. Nice to see your poems on this site. Thanks a lot.

  2. বসন্তের কবিতা গুলো খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে। তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী , কৃষ্টি কিরণ। মদনবাগ, সিমলাপাল, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ

    1. মিলন
      তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী

      মৃদুমন্দ হাওয়া সে যে
      জাগায় মনে প্রাণে শিহরণ,
      কোকিলের কুহু কুহু রবে
      বাসন্তী রঙে রঙীন দেহমন,
      অনন্ত সঙ্গীতের সুর নিয়ে
      রঙে রঙে মিশে ঘষে,
      হয় যে বসন্তের আগমন
      অরূপ সজ্জায় হয় মিলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Hey Dear!! Thank you for visit on TuneBN. Please Disable your AD Blocker to continue browsing.