Education

২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

২৬ শে মার্চ এর কবিতা বা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। আপনি যদি ২৬ মার্চ বা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা খুঁজে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনাকে অনেকখানি সহায়তা করতে পারবে। আর্টিকেলটি এ নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর ও সেরা সকল ২৬ শে মার্চ এর কবিতা বা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আপনারা পেয়ে যাবেন।

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতার বার্তায় বাংলাদেশকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর পরিপেক্ষিতে বাঙালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকতার সাথে দিনটিকে পালন করা হয়ে থাকে। অনেক লেখক এ দিনটিকে নিয়ে কবিতা, উপন্যাস, গল্প ইত্যাদি লিখেছেন। তবে আমাদের এই আর্টিকেলে দিনটিকে নিয়ে চমৎকার কিছু ২৬ শে মার্চ এর কবিতা বা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা পাবেন। চলুন আর দেরী না করে সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।

২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

নিম্নে কবিতা ও লেখকের নাম সহ ২৬ শে মার্চ এর কবিতা বা স্বাধীনতা দিবসের কবিতাগুলো একে একে দিয়ে দেওয়া হলো। কবিতাগুলো পড়ুন আশা করছি আপনার ভালো লাগবে। এছাড়া আপনার অন্য কোন প্রয়োজনে কবিতাগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর – রাকিবুক হায়দার

ভাত না পেয়ে যে কৃষক মরে যায় মহাজনের ধানের গোলায়,
তার জন্য কেবল গোর খোদকরাই কাঁদে,
রাষ্ট্রপ্রধান কেবল এঁটো হাতে শোক বার্তায় সাক্ষর করেন,
দাতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংস কাঠি দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে –
জাতির উদ্দেশ্যে সান্ধ্যকালীন রসালাপে মাতেন।

অনেক দেখেছি, একের পর এক মানুষ মরেছে ক্ষুধায়, চিকিৎসার অভাবে,
বাসস্থানের অভাবে ফুটপাতে ঘুমিয়ে পড়েছে,
শিক্ষা আর বস্ত্রের অভাবে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
অথচ মৌলিক অধিকার চাইতে গেলেই নেমে আসে পেটোয়া বাহিনী,
তুলে নেয় প্রিজন ভ্যানে,
তারপর একের পর এক মিথ্যে মামলা আর বিচার বিভাগীয় রসরসিকতা!
অনেক সহ্য করেছি, আর না!

কচুর স্বাধীনতা – দয়াল দাস

একদিন মানুষেরা কচুদের বলে,
চলো স্বাধীনতা আনি।
কচুরা জানে না, স্বাধীনতার মানে।
মানুষেরা বোঝায়, শুয়োরের হাত থেকে মুক্তির নামই স্বাধীনতা।
কচুরা বোঝে।

সেই থেকে কচু বোঝা মানে ভুল বোঝা।
ক’টা শুয়োর মেরে,
লাখ কচুর কষ ঝরিয়ে
স্বাধীনতা এল।
কচুরা নাচল।
আহা শুয়োর মুক্ত দেশ!
কেউ খাবে না কচু।
কেউ খাবে না?
নোংরা কচুরা বাড়তে বাড়তে
আকাশ ফুড়ে ঈশ্বর পেয়ে যাবে?
কচুরা নাচল।
নাচন থামল।
মানুষও যে কচু খায়।
ক্ষণে ক্ষণে প্রতিবাদ করে কিছু কচু।
সেই থেকে কচু খেলে গলা ধরে।
গলা ধরে,
গলা ধরে একদিন ছিড়েও ফেলবে।

স্বাধীনতা তুমি – শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।

স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক

স্বাধীনতা তুমি
পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা – দেবব্রত সিংহ

কথাটা ত মিছা লয়
লালগড়ের জঙ্গলমহলের সবাই জানে
ডুমুরগড়্যা, বেণাচাপড়া, বাঁকিশোল,হাতিঘোসা,শালডাঙ্গা
মোহনপুর, কলাইমুড়ির জানে সবাই
দিনের বেলা পুলিশ
রাতের বেলা উয়ারা,
পুলিশ বলে স্বাধীনতা
উয়ারা বলে মিছাকথা
ফের পুলিশ বলে স্বাধীনতা
ফের উয়ারা বলে মিছা কথা,
আমরা গরীব মানুষ
আমরা গো মুখখু মানুষ
খিদা বুঝি তিলষা বুঝি
ইসবের ত কিছু বুঝি নাই,
তবু দিনের বেলা পুলিশ আসে,
“হপন আছিস?”
হঁ আইজ্ঞা আছি
আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।
রাতের বেলা জঙ্গলমহলে রাত নামলে
আমার তালপাতায় ছাওয়া মাটির ঘরে
জুমড়াকাঠের আংরার পারা অন্ধকার
কপাট ও নাই হুড়কাও নাই
তখন উয়ারা আসে
কমরেড হপন আছো?
বলি হঁ আইজ্ঞা আছি
আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।
(সংক্ষেপিত)

নতুন স্বাধীনতা – কাজী জুবেরী মোস্তাক

তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী
আর ভাবে এ যেন তার পৈতৃক সম্পত্তি;
সারা রাষ্ট্র যেন তার বাপের তালুকদারী।

একদিন প্রতিবাদী হবে প্রতিটি কণ্ঠস্বর
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হবে এশহর;
গর্জে উঠবেই ভীত মুখগুলোর কণ্ঠস্বর।

এই শহর এই পথও একদিন দখল হবে
সেখানে নির্যাতিত মানুষের মিছিল হবে;
সেদিন সন্ত্রাসীবাদ নির্বাক চেয়ে থাকবে।

প্রতিটি বুক একদিন সাহসে ভরে যাবে
ভয় ভীতিকেও দিব্যি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাবে;
হাতে হাত রেখে সামনেও এগিয়ে যাবে।

সন্ত্রাসীদের আঁতুর ঘর ছিল যে শহরটা
ভয়ে আতঙ্কে তটস্থ ছিলো আমজনতা;
সেই শহরে পালিত হবে নতুন স্বাধীনতা।
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা – শামসুর রহমান

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নডছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাডির এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে
নডবডে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

উপসংহার

আশা করছি ২৬ শে মার্চ এর কবিতা নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে সেই সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের আরো অনেক নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে।

Imran Hossan

I am Imran, a student with the dream of becoming a professional developer, I love to explore, explore, learn interesting things on the Internet.

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button

Adblock Detected

Hey Dear!! Thank you for visit on TuneBN. Please Disable your AD Blocker to continue browsing.