২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস নিয়ে লেখা আমাদের এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। আপনি যদি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের লেখা এই আর্টিকেলটি আপনাকে অনেকখানি সহায়তা করবে।
আর্টিকেলটিতে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য উপস্থাপন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যা থেকে আপনি এ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ
- ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস কবিতা | ২৫ মার্চ কালো রাত কবিতা
- ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা
- ২৬ শে মার্চ এর কবিতা | স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
- ২৬ শে মার্চ এর স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, ছবি
- [Mp3 + Video] বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ লিখিত Pdf Download
Table of Contents
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস
একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা পৃথিবীতে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের ইতিহাস নামে পরিচিত। ২০১৭ সাল থেকে এই দিনটি “গণহত্যা দিবস” হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তা “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পরিচিত। মূলত পাকিস্তানিরা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের ইতিহাস এর এই অভিযানের নাম দেয় “অপারেশন সার্চলাইট“। এই অভিযানের নীল নকশা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
“অপারেশন সার্চলাইট” ছিল বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার একটি নরকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিলো পাকিস্তানি ঘাতকরা। এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বিশ্বের ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায় মেতে উঠে। তাই এই ভয়াবহ দিনটিকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি।
১৯৪৭ সালের দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে পাকিন্তান নামের যে রাষ্ট্রের জন্ম সেই রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুরুতেই পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও শোষণ চালাতে থাকে। এই শোষণ অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে শুরুতেই প্রতিবাদ করে বাঙালি জাতি। এই ধরাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। শুরু হয় বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্বে এবং স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালি জাতির ওপর ২৫ মার্চ বর্বর সশস্ত্র হামলা ও গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। যা বাঙালির কাছে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস হিসেবে পরিচিত।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত তথ্য
পালনকারী | বাংলাদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি |
জাতীয় তাৎপর্য | ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ |
তারিখ | ২৫ মার্চ |
আয়োজন | ২৫ মার্চ |
প্রথম পালন করা হয় | ২৫ মার্চ, ২০১৭ |
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। মুজিব ও ইয়াহিয়া খানের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এ খবর ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ায় বীর বাঙালি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নেতার নির্দেশের অপেক্ষায়।
বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার ঘর থেকে তার বাসভবনের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টকে দেওয়া সংবিধানের খসড়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করা এবং অনুমোদনের জন্য সময় নির্ধারণের কথা ছিল এদিন। ইয়াহিয়ার সহযোগী জেনারেল এসজিএমএম পীরজাদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফোন করে জানাবেন।
সারাদিন ধরেই আওয়ামী লীগের নেতারা টেলিফোনের অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি। এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “পরিস্থিতি সঙ্কটজনক“।
ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের পরই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা কর্তাদের সাথে।
এদিন সকাল ১১ টার দিকে একটি হেলিকপ্টারে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও মেজর জেনারেল ওমর সহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা রংপুর, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস ভ্রমণ করেন। বিকাল থেকেই পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারে টহল দিতে শুরু করে, সব ধরনের সামরিক সংস্থার সদস্যদের বার্তা দিতে থাকে অবশ্যম্ভাবী এক সামরিক অপারেশনের জন্য তৈরি থাকতে।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই গোপনে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। তিনি নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী।
এদিকে ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের খবর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যায় বঙ্গবন্ধুর কাছে। রাত ৯ টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে উপস্থিত দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সর্বাত্মক ভাবে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী। এ অবস্থায় আমাদের রাস্তা আমাদেরই দেখতে হবে। সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য তৈরি থাকতে হবে।”
দাবানলের মত ঘরে ঘরে খবর পৌঁছে যায় যে ইয়াহিয়া ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। বাঙালি বুঝে ফেলে এবার কিছু একটা ঘটবে। রাতেই পথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা এবং গড়ে তোলে অসংখ্য ব্যারিকেড। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়।
রাত ১০টার দিকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি কনভয় যুদ্ধ সাজে শহরের দিকে রওনা হয়।শহরমুখী সেনাবাহিনীর মেকানিক্যাল কলামটি প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয় ফার্মগেইটে। সেখানে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, অকেজো স্টিম রোলার ও ভাঙা গাড়ির স্তূপ জমিয়ে রাখা হয়েছিল রাস্তা আটকানোর জন্য। মুক্তিকামী বেপরোয়া প্রতিরোধোন্মুখ জনতার মাধ্য থেকে “জয় বাংলা” স্লোগান উঠছিল। গুলি করে এ প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ট্যাংকগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রেসকোর্স ময়দানের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর ৮০টির মতো সাঁজোয়া যানকে পূর্ণ যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
রাত ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের একটি অংশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের চারিদিকে অবস্থান নিতে শুরু করে। এ আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশের জেলা ও সাব ডিভিশনে বেতার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১১টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে দেয়। ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করে।
একই সময়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২তম বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পিলখানায় ইপিআর-এর ওপরও হামলা করে। ব্যারাকে থাকা বাঙালি সেনারা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।পিলখানা ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণের সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতে শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ; বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে গুলি, বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে প্রকম্পতি হয় পুরো ঢাকা শহর। সেনাবাহিনীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা এবং বস্তিবাসীর ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়। এই নজিরবিহীন নৃশংস হত্যাকান্ডই হলো ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাসের পরবর্তী প্রক্রিয়া
অপারেশন সার্চলাইটের পদ্ধতিগত গণহত্যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। ২৫ মার্চ এর গণহত্যা ফলে সূত্রপাত ঘটে স্বাধীনতা যুদ্ধের। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাসের পরের দিন বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়।
এরপর পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের অনুগতদের মিলিশিয়া গঠনে শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে তারা শেষমেশ টিকতে পারেনি। অন্য দিকে সামরিকভাবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ভারত। মোড় ঘুরতে শুরু করে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের। অবশেষে ভারতীয় বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তান নিঃশর্ত ভাবে আত্মসমর্পণ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও কোটি কোটি বাঙালির চেতনায় অমলিন হয়ে আছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়। সেদিনের পর থেকে ৫০টি ২৫ মার্চ শুধুমাত্র নিছক কোনো সংখ্যা বা তারিখ নয়। এ হলো এক পা, দু’পা করে হোচট খেতে খেতে শিশু বাংলাদেশের বেড়ে ওঠা। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের ইতিহাস এবং ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ত্যাগ-তিতিক্ষার একটাই দাবি- লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া এই স্বাধীনতাকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা। তাই বাঙালির কাছে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের ইতিহাস স্মারণীয় হয়ে থাকবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যতম একটি কালো অধ্যায় হলো ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস। অনেক সাধারণ মানুষ বিনা কারণে এ দিনটিতে প্রাণ দেয়। ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবসের মাধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে এবং পরিশেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের টিউনবিএনে ভিজিট করে আমাদের সাথে থেকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ইতিহাস নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে সেই সম্পর্কে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে যুক্ত থেকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।