EducationBangladesh

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা

আপনি কি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা খুঁজছেন? যদি খুঁজে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা পেয়ে যাবেন। আর্টিকেলে থাকা রচনাটি আপনি শিক্ষা ক্ষেত্রে রচনা লিখন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া ২৫ মার্চের গণহত্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার ক্ষেত্রেও রচনাটি ব্যবহার করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা

সূচনা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার নজির। ২০১৭ সাল থেকে এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস‘ হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ইতিহাস

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুইটি অংশ:পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পকিস্তানে ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তারই প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে শুরু হয় ৫২র ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৭ মার্চের ভাষণ। এতো কিছুর পরে পাকিস্তানিরা প্রতিশোধ নিতে ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন

১৯৫২ সালে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাঙালি, যা মোট নাগরিকের প্রায় ৫৪%। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। ভাষা আন্দোলনের পরে ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে।

১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন

১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলের একটি সম্মেলনে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালির ‘‘মুক্তির সনদ’’ হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। আইয়ুব খানের নির্যাতন নিপিড়ন এর বিপক্ষে যখন এটি পেষ করা হয় তখন এর পক্ষে জনসমর্থন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই একটি ঘটনা যেখানে জনসমবেশের সমর্থন খুব দ্রুত পাওয়া যায়। যখন জনগণ শেখ মুজিবকে আস্তে আস্তে পছন্দ করা শুরু করল তখন শেখ মুজিবর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের অপছন্দের তালিকায় পড়ে যেতে।

১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেট থেকেই গ্রেপ্তার করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এভাবেই শুরু হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাকেই করা হয় ১ নম্বর আসামি। তার সঙ্গে আরও ৩৪ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। মামলাটির নাম ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ হলেও এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবেই অধিক পরিচিতি পায়। ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, ‘কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। তিনি ভাষণটি বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করে বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। উক্ত ভাষণ ১৮ মিনিট স্থায়ী হয়।

২৫ মার্চের কালো রাত

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালি হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠেছিলো। রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলো বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২৫শে মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির উপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাই এটিকে বাঙালির কাছে কালো রাত নামে পরিচিত। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।

অপারেশন সার্চলাইট

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার সাংকেতিক নাম হল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি তথা পূর্ব পাকিস্তানকে নি’শ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী একটি সশ’স্ত্র অভিযান পরিচালনা করেছিল। তারা সেই নীলনকশার নাম দেয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

স্বাধীনতা অর্জন

হঠাৎ ২৫ শে মার্চ রাত ১২টায় চালানো হয় নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর নির্মম অত্যাচার। এসব দেখে বঙবন্ধু টের পান যে হয়ত তাকে খুন করা হবে অথবা তাকে গ্রেফতার করা হবে। ২৬ মার্চ সকালে তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার এর বাসা থেকে ওয়্যারলেস যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। এটি চটগ্রামে প্রেরণ করা হয়। চট্রগ্রামের আগরাবাদ থেকে দুপুরবেলা আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেন। এরপর ৯ মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর অর্জিত হয় আমাদের গৌরাবন্বিত স্বাধীনতা। আর এই সবকিছু শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস দিয়ে।

গণহত্যার তান্ডবলীলা

২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল জঘন্যতম গণহত্যার সূচনামাত্র। পরবর্তী ৯ মাসে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা সৃষ্টি করেছিল সেই বর্বর ইতিহাস, নিষ্ঠুরতা এবং সংখ্যার দিক দিয়ে ইহুদি নিধনযজ্ঞ (হলোকাস্ট) বা রুয়ান্ডার গণহত্যাকেও অতিক্রম করে গেছে। পরবর্তীতে বাঙালি জাতি আর মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করেনি। তারা নিজেরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহায়তা নিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ করে স্বধীনতা ছিনিয়ে আনে। মূলত এই গণহত্যা থেকে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার বীজ বোনা। ২৫ মার্চ গণহত্যার তান্ডবলীলা দেখে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার সাহস পায়।

উপসংহার

বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়। নানা অত্যাচার সহ্য করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। সকল শহীদ আমাদের জন্য গৌরব। আমরা এই গৌরবময় দিনটি পাওয়ার পিছনে অনেক ত্যাগ রয়েছে। মুক্তি পেতে আমাদের এই ২৫ মার্চের মতো ভয়াল কালো রাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই এই দিনটি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে আমরা স্মরণ করি। মুক্তির আনন্দ পাওয়ার আগে এই কালো রাতের কথা আমাদের সকল বাঙালির স্মরণ করা উচিৎ ও শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা উচিত।


আশা করছি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনাটি আপনার ভালো লাগেছে। রচনাটি আপনার কেমন লেগেছে সেই সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে কমেন্ট করুন। ২৫ শে মার্চ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এই রচনাটি ব্যবহার করতে পারেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে থেকে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের আরো অনেক আর্টিকেলের জন্য।

Imran Hossan

I am Imran, a student with the dream of becoming a professional developer, I love to explore, explore, learn interesting things on the Internet.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Hey Dear!! Thank you for visit on TuneBN. Please Disable your AD Blocker to continue browsing.