Website

ওয়েবসাইট কি? কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

প্রতিদিন আমরা কোন না কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করে থাকি আমাদের নিত্য প্রয়োজনে। ওয়েবসাইট কি? কত প্রকার? কি কি? কিভাবে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয় ইত্যাদি ওয়েবসাইট রিলেটেড অনেক প্রশ্ন আমাদের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমরা অনেকেই আছি যাদের কাছে এই প্রশ্ন গুলোন উত্তর আছে কিন্তু আবার এমনো অনেকেই আছে যাদের কাছে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর নেই কিন্তু এই সম্পর্কে জানতে চায়। আজকেই এই পোস্ট থেকে আমরা জানব ওয়েবসাইট সম্পর্কে। এটি কী কত প্রকার এবং কী কী? এর পাশাপাশি আমরা ওয়েবসাইট এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করব।

ওয়েবসাইট কি?

ওয়েবসাইট হচ্ছে কোন ওয়েব সার্ভারে রাখা ওয়েব পৃষ্ঠা, ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টি। যা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়। প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটের একটি ইউনিক নাম থাকে। এছাড়াও আমরা এভাবেও বলতে পারি, একই ডোমেইন অধীনে একাধিক ওয়েবপেইজের সমষ্টিকে ওয়েবসাইট বলে। ওয়েবসাইটকে সম্পর্কে সাইট বলা হয়ে থাকে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ওয়েবপেইজটা আসলে কী? পোস্টের শুরুতেই বলেছি এই শুধু আমরা ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানব না ওয়েবসাইটের এর সাথে সম্পর্কিত আরো অনেক বিষয় সম্পর্ক জানব। এজন্য আপনাকে ধৈর্য নিয়ে পুরো পোস্টটি মনযোগ দিয়ে পড়ে হবে।

HTML (Hyper Text Markup Language) যা দ্বারা ওয়েবপেজ লেখা হয় আর, HTTP (Hyper Text Transfer Protocol) যা দ্বারা Web Server ও ওয়েব ক্লায়েন্ট এর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। এই তথ্য আদান-প্রদান এর জন্য ওয়েব ব্রাউজারের ব্যবহার করা হয়।

ওয়েবপেইজ কি?

ওয়েবসাইট, ওয়েবপেইজ (Webpage)

ইন্টারনেট তথা ওয়েবে কোন লেখা, অডিও, ভিডিও, স্থির চিত্র, এনিমেশন ইত্যাদি তথ্যসমূহ রাখার জন্য যে পেইজ(Page) ব্যবহৃত হয় তাকে ওয়েবপেজ বলে। অর্থাৎ, যদি কোন ওয়েবে প্রথম ঢুকলে সে পেইজটি প্রদর্শিত হয় সেটি হলো হোম পেইজ। আবার সেই পেইজে অনেকগুলোন পেইজে থাকে যেমন: যোগাযোগ, ওয়েবসাইট সম্পর্কে, লগিন পেজ ইত্যাদি। এই সকল পেজগুলোকে ওয়েবপেজ বলা হয়।

ওয়েবপেইজ সম্পর্কে তো আপনার জানা হলো। কিন্তু, আপনি হয়তো ওয়েব পোর্টাল শব্দটি শুনে থাকবেন। তো জেনে নেওয়া যাক ওয়েব পোর্টাল আসলে কী?

ওয়েব পোর্টাল কি?

ওয়েব পোর্টাল হলো একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজের সমষ্টি যেখানে অনেকগুলো উৎস থেকে গুরুত্বপূর্ণ লিংক, কনটেন্ট ও সার্ভিস সংগ্রহিত থাকে। যা ব্যবহারকারীদেরকে সহজবোধ্যভাবে তথ্য উপস্থাপন করে। উইকিপিডিয়া কিন্তু সে দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েব পোর্টাল।

ওয়েব ব্রাউজার

যেকোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য আমাদের যেমন ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন তেমনি একটি ব্রাউজারও প্রয়োজন। যা দিয়ে আমরা কোন সাইট এক্সেস করতে পারব। এই ওয়েব ব্রাউজার মূলত ডেটা রিদিভ ও অনুবাদ করে ক্লায়েন্টকে ফলাফল প্রদর্শন করে। যেমনঃ গুগোল ক্রম, মজিলা, ফায়ারফক্স ইত্যাদি।

ওয়েবসাইট কত প্রকার ও কি কি?

সাধারণ ভাবে ওয়েবসাইটকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট অপরটি ডায়নামিক ওয়েবসাইট। এছাড়াও অবস্থানের ভিত্তিতে লোকাল ও রিমোট এই দুইটি ভাগেও আমরা ওয়েবসাইটকে ভাগ করতে পারি।

কিন্তু, যদি আপনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে ওয়েবসাইট কত প্রকার তাহলে এর উত্তর হবে ওয়েবসাইট দুই প্রকার। যথাঃ স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এবং ডায়নামিক ওয়েবসাইট।

এবার চলেন ওয়েবসাইটে এই প্রকারভেদ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ

গঠন বৈচিত্র‍্য এর ওপর ভিত্তি করে ওয়েবপেইজ বা ওয়েবসাইটকে সাধারণত দুইভাবে ভাগ করা যায়। যথা:

  1. স্ট্যাটিক ওয়েবপেইজ বা স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট (Static Webpage or Static Website)
  2. ডাইনামিক ওয়েবপেইজ বা ডাইনামিক ওয়েবসাইট (Dynamic Webpage or Dynamic Website)

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট কি?

যে সকল ওয়েবসাইটের ডেটার মান ওয়েবপেইজ প্রদর্শন করার পর পরিবর্তন করা যায় না তাকে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট বলে। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য স্ক্রিপ্টিং ভাষা ব্যবহার করা হয় না। HTML, CSS, JAVASCRIPT দিয়ে সাধারণত একটি স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরী করা হয়।

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য

  1. খুব দ্রুত লোড হয়।
  2. ডেটাবেজ এর সাথে সংযোগ থাকে না।
  3. কনটেন্ট নির্দিষ্ট থাকে।
  4. ব্যবহারিক তথ্য আপডেট করতে পারবে না।
  5. HTML, CSS, JS ইত্যাদি দিয়ে এটি ডিজাইন করা হয়ে থাকে।

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের সুবিধা

  1. নিয়ন্ত্রন সহজ এবং সহজে পরিচালনা করা যায়।
  2. খরচ কম এবং সাইট দ্রুত লোড নেয়।
  3. নেট স্পিড কম হলেও দ্রুততার সাথে ডেটা ডাউনলোড করা যায়।
  4. সহজে ওয়েবপেইজের লে-আউট পরিচালনা করা যায়।

স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের অসুবিধা

  1. কনটেন্ট আপডেট করতে প্রচুর সময় লাগে।
  2. ওয়েবসাইটের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা ঝামেলা এবং কঠিন হয়ে যায়।
  3. ব্যবহারকারীর ইনপুট নেওয়ার কোন ব্যবস্থা থাকে না।
  4. নতুন কোন পেইজ যুক্ত করতে হলে সেই পেইজের জন্য আলাদা ভাবে কোডিং করতে হবে।

ডায়নামিক ওয়েবসাইট কি?

যে সকল ওয়েবসাইটের ডেটার মান ওয়েবপেইজের প্রদর্শনের পরেও পরিবর্তন করা যায় তাকে ডায়নামিক ওয়েবসাইট বলে। ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরীর জন্য স্ক্রিপ্টং ভাষা যেমন – PHP, ASP, Python ব্যবহার করা হয় এবং ওয়েবপেইজটি ডিজাইনের জন্য HTML, CSS, JS ও ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি ডেটাবেজেরও (SQL/ MYSQL) প্রয়োজন পড়ে।

ডায়নামিক ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য

  1. পরিবর্তনশীল তথ্য বা ইন্টারঅ্যাক্টিভ ওয়েবপেইজ তৈরী করা।
  2. রানটাইমের সময় পেইজের ডিজাইন বা কনটেন্ট পরিবর্তন হতে পারে।
  3. ডেটাবেজ ব্যবহৃত হয়।
  4. ব্যবহারিক তথ্য আপডেট করতে পারে।

ডায়নামিক ওয়েবসাইটের সুবিধা

  1. অনেক বেশি তথ্য বহুল হতে পারে।
  2. তথ্য ও বিষয়বস্তু খুব দ্রুত আপডেট করা যায়।
  3. নির্ধারিত ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ধারিত পেইজ প্রদর্শন করা যায়।
  4. ব্যবহারকারীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ এক্সেস সেট করা যায়।

ডায়নামিক ওয়েবসাইটের অসুবিধা

  1. খরচ বেশী।
  2. নিয়ন্ত্রণ ও উন্নায়ন করা তুলনামূলক জটিল এবং কঠিন।
  3. তথ্য হ্যাক এর সম্ভাবনা থাকে
  4. ডেটাবেজ ব্যবহার করার জন্য ডেটা লোড হতে বেশী সময় লাগে।

ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ডায়নামিক ওয়েবসাইটের অন্যতম উদাহরণ। যেমনঃ ফেসবুকে আপনার নিউজ ফিড এর সাথে আমার নিউজ ফিডের মিল নেই, আপনার ফেন্ড লিন্ড এর সাথে আবার আমার ফ্রেন্ড লিস্টের মিল নেই। আবার, ফেসবুকে আমরা (ব্যবহারকারীরা) ডেট ইনপুট দিতে পারি যেমনঃ টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি।

অনলাইন থেকে আয় করতে চাইলে এই টিউনগুলো পড়ুন –

আবার অবস্থানের ওপর ভিত্তি করেও ওয়েবপেইজ বা ওয়েবসাইট দুই প্রকার। যথাঃ

  1. লোকাল ওয়েবপেইজ (Local Webpage)
  2. রিমোট ওয়েবপেইজ (Remote Webpage

লোকাল ওয়েবপেইজ কি?

স্থানীয়ভাবে ডিজাইন করা ওয়েবপেইজগুলোকে লোকাল ওয়েবপেইজ বলা হয়। লোকাল ওয়েবপেইজগুলো সাধারণত সোর্স ড্রাইভ ও ডিরেক্টরি থেকে সহজে ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের ওয়েবপেইজ ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন পড়ে না।

রিমোট ওয়েবপেইজ কি?

স্থানীয় কম্পিউটার ব্যতীত অন্য কোন কম্পিউটার বা সার্ভারে সংরক্ষিত ওয়েবপেইজগুলোকে রিমোর্ট ওয়েবপেইজ বলা হয়। রিমোট ওয়েবপেইজ ডাউনলোড করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন। এ ধরনের ওয়েবপেইজ ব্যবহারের জন্য ওয়েব অ্যাড্রেস জানার প্রয়োজন পড়ে। এরুপ অ্যাড্রেসকে URL (Uniform Resource Locator বলা হয়।

প্রত্যকটি ওয়েবসাইটের URL ইউনিক হয়ে থাকে। প্রত্যকটি ওয়েবসাইটের URL এ যে নামটি থাকে সেটিকে ডোমেইন নেম বলা হয়। ডোমেইন সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন – আজীবনের জন্য ফ্রি হোস্টিং এবং ফ্রি ডোমেইন নিয়ে নিন

এছাড়াও আমরা ব্যবহারের ভিত্তিতেও ওয়েবসাইটের শ্রেণিবিভাগ করতে পারি। যেমনঃ

  • আর্কাইভ সাইটঃ পুরনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সকলের ব্যবহারের জন্য জমা রাখা হয়।
  • ই-কমার্স সাইটঃ পন্য কেনা-বেচার জন্য তৈরী করা হয়।
  • নিউজ সাইটঃ এসব সাইটে বিভিন্ন ধরনের খবরা-খবর পাওয়া যায়।
  • ব্লগ সাইটঃ বিভিন্ন ব্লগ সাইটে বিভিন্ন নিশ ভিত্তিক কনটেন্ট পাওয়া যায়।
  • ডাউনলোড সাইটঃ বিভিন্ন ধরনের ফাইল, সফটওয়্যার ইত্যাদি ডাউনলোড করা যায়।
  • পোর্টফোলিও সাইটঃ নিজের সম্পর্কে ভিভিন্ন ইনফরমেশন থাকে। যাতে করে সাইটের ভিজিটর যার পোর্টফোলিও তার সম্পর্কে জানতে পারে।

ইত্যাদি। এমন আরো অনেক রকমের সাইট আমাদের এই ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছি।

উপসংহার

এই ছিল আজকের টিউন। আশা করছি টিউনটি/ পোস্টটি থেকে আপনি ওয়েবসাইট সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পেরেছেন এবং এই তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে। পোস্টটি লিখতে গিয়ে যদি কোথাও কোন ভুল হয়ে থাকে এবং পোস্টটির সম্পর্কে মতামত জানাতে কমেন্ট করুন আর, সম্ভব হলে পোস্টটি আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধাবদের সাথে শেয়ার করুন যাতে করে তাড়াও এই সম্পর্কে জানতে পারে। এই ধরনের আরো অনেক পোস্ট পেতে টিউনএন এর সাথেই থাকুন।

Imran Hossan

I am Imran, a student with the dream of becoming a professional developer, I love to explore, explore, learn interesting things on the Internet.

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Hey Dear!! Thank you for visit on TuneBN. Please Disable your AD Blocker to continue browsing.